বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন এবং বাস্তবতা
বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন খুবই চর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন অব্দি মোট জনসংখ্যার অন্তত সাত পার্সেন্ট মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তারা বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই বসবাস করে তবে প্রধানত সিলেট মেহেরপুর যশোর এসব এলাকাতে হিন্দু ধর্মালম্বি মানুষ বেশি বাস করে।
এই চব্বিশ সালের পাঁচ আগস্ট বাংলাদেশ তার দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছে এক গণঅভ্যুত্থান বা গণ বিপ্লবের মাধ্যমে একটা স্বৈরাচারী সরকার ব্যবস্থা কে বাংলাদেশের মানুষ ছাত্র জনতা মূল উৎপাটন করেছে। এতে করে সারাদেশে মানুষ আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে। যার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুদ্ধ জনতা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের পার্টি অফিস ও নেতাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। তারা আন্দোলনে দানবীয় ভূমিকা নেওয়া পুলিশ বাহিনীর উপরও হামলা করে। যাতে করে দেশে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে খবর আসে,দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বা সনাতন ধর্মালম্বীদের বাড়িতে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হল কারা এই হামলা করছে হামলাগুলো কি সাম্প্রদায়িক নাকি রাজনৈতিক যদিও এসব তদন্তের বিষয়। কিন্তু বাজারে চাওর হয়েছে যে জামাত-বিএনপি এই হামলা করছে যদিও জামাত এবং বিএনপির নেতারা আগে থেকেই সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের বিষয়ের সতর্ক করেছিল এবং পাহারা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এদিকে বিএনপির সমর্থক রা এবং বিভিন্ন নাগরিক সমাজের সচেতন নাগরিকরা দাবি করছে যে হামলাগুলো আওয়ামী লীগের বা ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা করছে কেননা তারা বিশেষ উদ্দেশ্যে বিশেষ দেশ কে এই বার্তা দিতে চায় যে একমাত্র পলাতক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার অধীনেই সংখ্যালঘুরা নিরাপদ থাকে।
এদিকে অনেক হিন্দু নাগরিকরা এবং নেতারা এটা দাবি করতে চাইছেন যে হামলাগুলো আওয়ামী লীগ আর বিএনপি যেই করুক তাদেরকেই সব সময় বলে পাঠা হতে হয়। বাংলাদেশ হিন্দু ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক গোবিন্দ প্রামাণিক দাবি করছেন যে হামলাগুলো রাজনৈতিক ছিল এবং হাসিনা সরকার সব সময়ই বিপদে পড়লে সনাতন ধর্মালম্বীদের উপর সাওয়ার করে। আওয়ামী লীগ যখনই বিপদ দেখে তখন ওই দেশে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করে যাতে করে আঞ্চলিক পরাশক্তি এবং তাদের হিন্দুত্ববাদী সরকারকে এটা বোঝানো যায় যে বাংলাদেশে হিন্দু রক্ষার্থে আওয়ামী লীগ একমাত্র বিকল্প।
বাংলাদেশের যখন এসব বিতর্ক চলছিল তখন ভারতের হিন্দুত্ববাদী উগ্র মিডিয়াগুলো জোরে সোরে বাংলাদেশ বিরোধী এবং হিন্দুদের নিয়ে মিথ্যা গুজব রটাতে থাকে। এসব মিডিয়া তাদের নিজেদের জনগন দ্বারা গদি মিডিয়া বা গুজব রটনাকারী চ্যানেল হিসেবে আলোচিত সমালোচিত। প্রশ্ন হতে পারে ভারতীয় মিডিয়াগুলো বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে এত আক্রমণাত্মক কেন। আমার মতে এর কারণ হতে পারে তারা চায় বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের বিষয়টা ভারতে সনাতনীদের সামনে তুলে ধরতে যাতে করে তাদের হিন্দুত্ববাদী প্রচার গতি পায়। ভারতীয় মিডিয়াগুলো তাদের নিষ্ঠুর এবং নোংরা রাজনীতির ফায়দা লুঠার জন্য বাংলাদেশের সাধারণ হিন্দু জনগণকে তাদের দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। যেমন ভারতের বিজেপির আইটি সেল থেকে অর্থ প্রাপ্ত রিপাবলিক বাংলা টিভি, বাংলাদেশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি গুজব রটাচ্ছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এ ধরনের টিভিগুলো ভারতের মিনিস্ট্রিম মিডিয়া হিসেবে পরিচিত তাদের না আছে কোন ফ্যাক্ট চেকিং সিস্টেম অথবা কোন ভুল হলে তারা ক্ষমা চাওয়ার ধারও ধারে না। যা আমার মতে লিবারেল ভারতীয়দের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। কারণ এগুলা নিয়া বাংলাদেশের ট্রল হচ্ছে হাসি তামাশা হচ্ছে ইন্ডিয়ান মিডিয়া গুলো বাংলাদেশ এ এখন হাসির খোরাক।
বাংলাদেশের সরকারি তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ৩০ টি জায়গায় হামলা হয়েছে হামলাগুলোর মোটিভ কি ছিল কারা হামলা করেছে কেন হামলা করেছে হামলা গুলো কি রাজনৈতিক হামলা ছিল নাকি কমিউনাল হামলা ছিল তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে । সিলেট, মেহেরপুর, শরীয়তপুর, ঠাকুরগাঁও সনাতনীদের উপর হামলার ঘটনাগুলো বাংলাদেশের প্রায় সব পক্ষ যেমন সেনাবাহিনী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মোঃ ইউনুস, বৈষম্য বিরোধী ছাত্রসমাজ, বিএনপি, গন অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী সবাই প্রায় এক সুরে হামলার প্রতিবাদ এবং সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছে এবং তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। হামলার যে ঘটনা যেমন ঘটেছে তেমনি মাদ্রাসার ছাত্র বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র এবং অন্যান্যরা মিলে রাত জেগে মন্দির পাহারা দিয়েছে যা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ। মসজিদের মাইকে প্রতিধ্বনিত হয়েছে সম্প্রীতির বার্তা নিজের প্রতিবেশী হিন্দু হোক বা মুসলমান পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে, যা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার ।
গতকাল থেকেই সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষেরা ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমেছে যা খুবই প্রশংসার দাবিদার এবং আমি মনে করি বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ এটা ভালোভাবেই নিয়েছে কিন্তু অনেকেই অভিযোগ করছে বর্তমানে গা-ঢাকা দেওয়া গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের ধূসররা হিন্দুদের আড়ালে মাঠে নেমে এসেছে তারা আবারো সনাতনীদের দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চায় তারা একটা গোলযোগ বাধাতে চায় এবং যার দায়ভার পুরোপুরি হিন্দু ভাই-বোনদের উপর চাপাতে চায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। যা এই প্রশংসনীয় আন্দোলনের মূল স্প্রিট অনেকাংশেই সীমিত করে ফেলেছে।
আমার শেষ কথা এই দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে ক্ষমতার পালাবদলে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করা হয় যা অনস্বীকার্য এবং খুবই নিন্দনীয়। এবারও আমি এবং সচেতন নাগরিক হিসাবে সকলেই এটা ধারণা করেছিল যে মন্দির গুলোতে অথবা সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হামলা করা হতে পারে যার কারণে আগেভাগেই দেশের অনেক স্থানে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
কিন্তু আমি বলতে চাই কোটা আন্দোলনের নিহত রুদ্র সেন, দীপ্ত, রিয়া গুপ্ত এদের অনুসারীরা কি এসব টের পায়নি।তাদের স্থাপনায় যে আঘাত আসতে পারে তা কি তারা টের পায়নি নাকি বরাবরের মতোই ভিতুর মতো গর্তে লুকিয়ে ছিল। তারা কেন তাদের পাড়া, মন্দির, বাড়িঘর রক্ষার্থে এগিয়ে এলোনা। মন্দির গুলোর কেন পাহারার ব্যবস্থা করল না। এখন অনেকে জিজ্ঞেস করবে স্বাধীন দেশে মন্দির পাহারা কেন, তাহলে ঢাকায় ডাকাতের ভয়ে, লুটেরার ভয়ে, সন্ত্রাসীদের ভয়ে মানুষ তার বাড়ি ঘর কেন পাহারা দিয়েছিল। ঢাকার মানুষ যদি তাদের জীবনের নিরাপত্তায় রাস্তায় বাইর হতে পারে তাহলে হিন্দু সমাজের তরুণরা কোথায় ছিল? এত অভিযোগ কাদের উপর?দেশেতে তখন কোন প্রশাসন ছিল না তা সবাই জানে, কারা এর নিরাপত্তা বিধান করত? এটা কি হিন্দুদের তরুণদের দায়িত্ব ছিল না? দীপ্ত, রুদ্রসেনদের উত্তরসূরিদের দায়িত্ব ছিল না নিজেদের পরিবার এবং সমাজকে রক্ষা করা? প্রশ্নগুলো রেখে গেলাম উত্তর যদি পাও নিজেকে দিও।
Comments
Post a Comment